রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
১৭৩ হজযাত্রীর ফ্লাইট কাল এখনো ভিসা ও বাড়িভাড়া হয়নি

১৭৩ হজযাত্রীর ফ্লাইট কাল এখনো ভিসা ও বাড়িভাড়া হয়নি

স্বদেশ ডেস্ক: দু’টি হজ এজেন্সির ১৭৩ জন হজযাত্রীর সৌদি আরব যাওয়ার ফ্লাইট আগামীকাল শুক্রবার। অথচ তাদের জন্য হজভিসা ইস্যু হয়নি, মক্কা-মদিনার বাড়ি ভাড়াও করা হয়নি। গ্রুপ লিডাররা টাকা না দেয়ায় এই যাত্রীদের হজে যাওয়ার বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাচ্ছে না বলে দাবি এজেন্সি মালিকের। গতকাল দু’টি এজেন্সি মালিকের সাথে বৈঠক করেছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

এ দিকে একটি ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকে ১৯৮ জন হজযাত্রীর বিমানের টিকিট দেয়ার কথা বলে টিকিটপ্রতি ৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত হিসাবে মোট ৯ লাখ টাকা নিয়ে টিকিট না দেয়া এবং টাকাও ফেরত না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সুরেশ^র ট্র্যাভেলস নামে একটি এজেন্সির বিরুদ্ধে। ওই এজেন্সির বিরুদ্ধে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন মেসার্স ওয়াহিদ ট্র্যাভেলস নামে একটি হজ এজেন্সি।
তবে অভিযুক্ত এজেন্সির মালিক অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটি ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু উভয় মন্ত্রণালয়ই অভিযোগ আমলে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে শেষের দিকে গ্রুপ লিডারদের প্রত্যারণা ও টিকিটসহ অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে হাবের সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, এ দু’টি হজ এজেন্সির হজযাত্রীর সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমরা বৈঠক করেছি। আমরা এই সমস্যা সমাধান করে হজযাত্রীদের পাঠানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সুরেশ^র ট্র্যাভেলসের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, হাবের কাছে এমন অভিযোগের কোনো কপি এসেছে কি না এখনো আমি জানি না।

জানা গেছে, স্বদেশ ওবারসিজের ১০৬ জন ও বিদেশ ভ্রমণ ট্র্যাভেলসের হজযাত্রীর ফ্লাইটের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট আগেই করা হয়েছে। এই হজযাত্রীদের ফ্লাইট আগামীকাল শুক্রবার। কিন্তু গতকাল এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই হজযাত্রীদের সৌদি আরবের বাড়িভাড়া ও তাসরিয়ার অনুমোদন নেয়া হয়নি ফলে ভিসারও আবেদন করা হয়নি। আশকোনা হজ অফিস ও হাবের নিজস্ব মনিটরিংয়ে বিষয়টি নজরে আসার পর গতকাল বিকেলে উভয় এজেন্সি মালিককে নয়াপল্টনে হাব কার্যালয়ে ডেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করা হলেও কোনো সমাধানে আসা যায়নি। বৈঠকে এজেন্সিগুলো গ্রুপ লিডার থেকে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করেন। হাব যেকোনো উপায়ে হজযাত্রীদের পাঠানোর জন্য এজেন্সি মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে।
এই হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করে আগামীকাল নির্ধারিত ফ্লাইটে পাঠানো সম্ভব হবে কি নাÑ জানতে চাইলে হাব সভাপতি বলেন, আমরা এজেন্সি দু’টির সাথে বৈঠক করেছি। কিন্তু নির্ধারিত ফ্লাইটে পাঠানো যাবে কি না সেটা বলা মুশকিল। তবে আমরা এই হজযাত্রীদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই দু’টি এজেন্সির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ এসেছে কি না জানতে চাইলে হাব সভাপতি বলেন, আসলে এবার কিন্তু মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সব চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে। আপনারা দেখে থাকবেন প্রথমে হজ অফিস ৫৫টি এজেন্সিকে ডেকেছিল। পর্যায়ক্রমে সেটা ১২টি এজেন্সিতে এসে ঠেকে। এখন আমরা যে এজেন্সির সমস্যা দেখছি আলোচনা করে সেই সমস্যাগুলো সমাধান করে দিচ্ছি। এই ধরনের অনেক সমস্যা সমাধান করে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
জানা গেছে, দেশ ভ্রমণ প্রাইভেট লিমিটেডের ৩৭ জন হজযাত্রীর বাড়িভাড়া ও ভিসা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। গ্রুপ লিডার টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দেয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে হাবের মধ্যস্থতায় এই হজযাত্রীদের সমস্যার সমাধান হয়। এই হজযাত্রীদের আগামীকাল ও আগামী ৪ আগস্ট ফ্লাইট নির্ধারিত আছে। এজেন্সির মালিক মো: আবু তাহেরের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হজযাত্রীদের সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। তাদের ভিসার জন্য ইতোমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে। হাব সভাপতিও এই এজেন্সির হজযাত্রীদের সমস্যা সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা জানান।

চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি জানিয়ে হাবের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ছোটখাটো কিছু সমস্যা আছে সেগুলো হজ ও অফিসের সাথে সমন্বয় করে হাবের মধ্যস্থতায় সমাধান করে দেয়া হচ্ছে।

৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
মেসার্স ওয়াহিদ ট্র্যাভেলসের ম্যানেজিং পার্টনার মো: শিববুল ওয়াহিদ সুরেশ^র ট্র্যাভেলসের মালিক এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুবের বিরুদ্ধে ১৯৮ জন হজযাত্রীর জন্য টিকিটের কথা বলে নেয়া ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে গত ৪ জুলাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ করার কথা জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়েও।

লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, গত ৩.৬.১৯ তারিখে হাজীদের ১৯৮টি সৌদি এয়ারলাইন্সের হজ টিকিট বাবদ অতিরিক্ত ৬ লাখ টাকা এবং ৯.৬.১৯ তারিখে আরো তিন লাখ টাকা গ্রহণ করেন সুরেশ^রের মালিক মঞ্জুর মোর্শেদ ( মাহবুব)। কিন্তু তিনি এ পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইন্সের কোনো টিকিট প্রদান করেননি এবং অতিরিক্ত ৯ লাখ পরিশোধে গড়িমসি করছেন। অভিযোগে তিনি আরো বলেন, উনার কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে তিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিমানের টিকিট ক্রয় করে হাজীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি এই ৯ লাখ টাকা আদায়ে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং সুরেশ^র ট্র্যাভেলসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এস এন মঞ্জুর মোরশেদ মাহবুব অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেলস এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি।

শিবলুল ওয়াহিদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, হজযাত্রীদের টিকিটের মূল টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। আমি সুরেশ^র ট্র্যাভেলসকে টিকিটপ্রতি অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকা হিসাবে দুই দফায় ৯ লাখ টাকা দেই। টাকা প্রদানের ৬ লাখ টাকা এস এ পরিবহনের মাধ্যমে এবং তিন লাখ টাকা সুরেশ^রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাই। যার কপি অভিযোগের সাথে আমি দিয়েছি। তিনি জানান, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আমার অফিসে ফোন দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের কোনো চিঠি বা ইমেইল আমি পাইনি। বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে আমি একটি ই-মেইল পেয়েছি। তাতে আগামী ৩০ জুলাই শুনানিতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে এস এন মঞ্জুর মোরশেদ মাহবুব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিমান টিকিটের জন্য কোনো লেনদেনের প্রশ্নই আসে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি সৌদি এয়ারের টিকিটের অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণেই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দেয়া হয়েছে। দুই দফা ৯ লাখ টাকা প্রদানের ডকুমেন্টের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর মঞ্জুর মোরশেদ মাহবুব বলেন, উনার সাথে আমার পূর্বের লেনদেন রয়েছে। ওই লেনদেনের কোনো টাকা তিনি পরিশোধ করে থাকতে পারেন।
এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিবলুল ওয়াহিদ বলেন, সুরেশ^র ট্র্যাভেলসের সাথে আমার ইতঃপূর্বে কোনো লেনদেন হয়নি। আমি কখনো ওখান থেকে টিকিট নেইনি। উনার দাবি সঠিক নয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। যেহেতু হজযাত্রীদের কোনো সমস্যা হয়নি সে জন্য হজের পরে বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি গ্রহণ করা হবে।
হাবের সভাপতির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি হজক্যাম্পকেন্দ্রিক ব্যস্ত। এ বিষয়ে হাব অফিসে কোনো অভিযোগ এসেছে কিনা আমি এখনো জানতে পারিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877